খবরবাড়ি ডেস্কঃ অনিয়ম-দূর্ণীতির সংবাদ প্রকাশের জেরে যমুনা টেলিভিশনের গাইবান্ধা করেসপডেন্ট জিল্লুর রহমান পলাশসহ ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জের সাবেক (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারের করা মানহানির দুই মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আর কিউ এম জুলকার নাইন শুনানি শেষে মামলা দুটি খারিজের আদেশ দেন।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঘুষ বাণিজ্য ও দূর্ণীতি কর্মকান্ড নিয়ে পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার হয় যমুনা টেলিভিশন ও কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
এতে মানহানীর অভিযোগ এনে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে দু’টি মামলা দায়ের করেন নুরুন্নবী সরকার। মামলায় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীসহ ১২ জনকে বিবাদী করা হলেও তদন্ত শেষে ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। এরমধ্যে আবু জাহিদ কারী নামে এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মো. ফরহাদ হোসেন লিটু বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলা দুটির চার্জ গঠন হয়। এরপর সাক্ষ্য গ্রহণের একাধিক দিন ধার্য থাকলেও বাদী আদালতে হাজির না হয়ে বাববার সময়ের আবেদন করেন। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য তারিখেও বাদী সময় চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার বাদীকে স্ব-শরীরে আদালতে উপস্থিত থাকার আদেশ দেয়। কিন্তু আদালতে শুনানির সময় বাদী নুরুন্নবী সরকার ও তার পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি তার পক্ষে আইনজীবী কোন প্রকার তদবির গ্রহণ করেন নাই। পরে আদালতের বিচারক বারবার বাদীকে ডাক দেওয়া সত্বেও তাকে না পাওয়া যায়নি। পরে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৭ ধারা অনুসারে অত্র মামলা দু’টি খারিজ আদেশ দেন বিচারক।
এ বিষয়ে সাংবাদিক জিল্লুর রহমান পলাশ বলেন, একাধিক তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে পিআইও নুরুন্নবীর ঘুষ-দূর্ণীতি কর্মকান্ড নিয়ে শতভাগ সত্য সংবাদ প্রকাশের পরও আমাদের নামে হয়রানিমূলক মানহানীর দুটি মামলাটি করেন। আদালত কর্তৃক সমন জারির পর আমরা জামিন নিয়েছি এবং নিয়মিত আদালতে হাজির দেই। কিন্তুু মামলার বাদী নুরুন্নবী নিজে এবং সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারেনি। এছাড়া তিনি আইনজীবীদের মাধ্যমে অভিযোগও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত হয়রানীর উদ্দেশ্য আমাদের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের জয় হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা সত্যের জয় হিসেবে দেখছি।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর দুই মামলার হাজিরা দিতে সময়, শ্রম ও অর্থ খরচসহ অনেক হয়রানী হতে হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের পেশাগত মান-মর্যাদা ও সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ সম্মানহানি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নেব।
প্রসঙ্গত; ২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর টানা ৫ বছরের চাকরিতে নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্ণীতির অভিযোগ ওঠে। ঘুষ- দূর্ণীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকসহ পাঁচটি মামলা হয় সুন্দরগঞ্জ থানায়।
এদিকে; দূর্ণীতির সংবাদ প্রচারে তদন্তে সত্যতা মেলায় গেল বছর নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে দূর্ণীতি, কমিশন বাণিজ্যে সিন্ডিকেট ও অসদাচরণের দায়ে বিভাগীয় দু’টি মামলা হয়। একই সঙ্গে লঘুদণ্ড হিসেবে তার বার্ষিক বর্ধিত বেতন স্থগিত ও স্থায়ীভাবে বেতন গ্রেড নিম্নতর (ডিমোশন) পদাবনতির আদেশ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। এছাড়া কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য ও অসদাচরণের দায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিল মাসে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা থেকে তাকে বদলি করা হলেও তিনি আজও তার কর্মস্থল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় যোগদান করেনি।