বাংলাদেশ নদীবেষ্টিত দেশ। দেশের চরাঞ্চলে বরাবরই যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল চ্যালেঞ্জিং। বালুকাময় পথ, অসমতল ভূমি, আর বর্ষা মৌসুমে বন্যার কারণে এখানকার মানুষজনকে নিত্যদিনের যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহনে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে স্থানীয়দের কৌশলী উদ্যোগ বদলে দিচ্ছে পরিস্থিতি।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরে এখন ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি’ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা কৃষকদের জন্য যেমন আর্শীবাদ। তেমনি চরবাসীর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। চরের রাস্তা-ঘাট সাধারণ যানবাহনের উপযোগী নয়। শুকনো মৌসুমে রাস্তাগুলো বালুর স্তুুপে ঢাকা পড়ে। ফলে বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল বা সাধারণ গাড়ি চলাচল করতে কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ছোট আকৃতির চাট্টু ঘোড়ার গাড়ি এক অনন্য সমাধান এনে দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থাকায় চরবাসীর একমাত্র ভরসা নৌকা। এসব ঘোড়া গুলো ছোট হলেও অসম্ভব কর্মক্ষম। এসব ঘোড়া শক্তিশালী প্রাণী হওয়ায় বালুকাময় ও কাঁদামাটিতে সহজেই চলতে পারে। তুলনামূলক কম খাবারেই দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে সক্ষম হয়। ফলে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থায় এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
টাট্টু ঘোড়ার গাড়ির চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলায় কৃষিপণ্য এবং মানুষ পরিবহন করে বেশ ভালো আয় হয়। শুধু এই গজারিয়াতে প্রায় ১৭টির মত সক্রিয় ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে। যা প্রত্যেক হাটে (শনি ও মঙ্গলবার) যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনে ভালোই আয় হয় আর বাকী দিনগুলোতে মোটামুটি আয় হয়। তবে বর্ষ মৌসুমে সময় আয় কমে যায়। কারণ তখন সবাই নৌকা দিয়ে যাতায়াত করে।
তিনি আরো জানান, এসব ঘোড়া সাধারণত দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলের বিশেষ হাট থেকে কেনা হয়। প্রতিটি চাট্টু ঘোড়া কিনতে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে ঘোড়াগুলো দিয়ে কয়েক বছর ভালোভাবে কাজ করানো যায়।
সমাজকর্মী আপেল মাহমুদ বলেন, স্থানীয় প্রশাসন যদি টাট্টু ঘোড়ার গাড়ির চালকদের জন্য সহজ কিস্তিতে ঋণ সুবিধা চালু করে তাহলে এই ব্যবস্থা আরো জনপ্রিয় হতে পারে। পাশাপাশি চরাঞ্চলে কিছু পাকা রস্তা তৈরি হলে বর্ষা মৌসুমেও এটির ব্যবহার অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী মন্ডল মুঠোফোনে জানান, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করেছে টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি। এ ইউনিয়ন পুরোটাই চরের মধ্যে তাই ইউনিয়নের সকল বাসিন্ধারাই শুঙ্ক মৌসুমে টাট্টু ঘোড়ার গাড়িতে চলাচলে অভ্যস্ত।