বিশ্বের প্রাচীন চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম কান চলচ্চিত্র উৎসব। বেশ কয়েকবার এ উৎসবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা। এ বছর অংশগ্রহণের পরিধি বেড়েছে। এবারের উৎসবটি বাংলাদেশের জন্য অন্য রকম। কারণ এই প্রথমবার বাংলাদেশের অফিশিয়াল স্টল রয়েছে এ উৎসবে। কানের বাণিজ্যিক বিভাগ মার্শে দ্যু ফিল্মে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টল বসে। উৎসবটির বাণিজ্যিক বিভাগ মার্শে দ্যু ফিল্মে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতেই এ আয়োজন। ৭৬তম আয়োজনে এ বিভাগেই যুক্ত হলো বাংলাদেশ। এছাড়া এবারের উৎসবে মার্শে দ্যু ফিল্মে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা ‘মা’।
মা পরিচালনা করেছেন অরণ্য আনোয়ার। এ সিনেমার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমণি। শুক্রবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় এটি। পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের পালে-ই থিয়েটারে মা দেখানোর পর অরণ্য আনোয়ার বলেন, ‘আমি আবেগে আপ্লুত, এ প্রদর্শনীর পর দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যা ভেবেছিলাম তার সবটুকুই পেয়ে গেছি।’ ২০ মে মা সিনেমার প্রদর্শনী শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি শেয়ার করেন নির্মাতা। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল টিকিট হাতে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরে নেমেছিলাম কান ফ্যাস্টিভ্যাল ময়দানে। আজ ওরা সবাই এল মা দেখতে। উচ্ছ্বসিত আবেগে জানিয়েছে ওদের অনুভূতি। স্যালুট কানের বন্ধুরা আমার। আর কখনো হয়তো দেখা হবে না, অথবা দেখা হবে অন্য কোনো আসরে। তখন হয়তো মাতব আবারো কোনো উল্লাসে। ভালোবাসা তোমাদের, বাকি জীবন মনে থাকবে। মনে রাখব এ আসর।’
গুণী নাট্য নির্মাতা অরণ্য আনোয়ারের প্রথম সিনেমা মা। সিনেমাটির প্রচারে কোনো কমতি রাখছেন না তিনি। কানের দরবারে সংযুক্ত হয়ে মা সিনেমাটির প্রচারণায় নতুন হাওয়া লেগেছে। বাণিজ্যিক বিভাগে প্রদর্শনী বাংলাদেশের সিনেমার জন্য নতুন কিছু নয়। তবে ‘মা’-এর প্রিমিয়ারের আগের দিনের ভিন্নতা ছিল। কারণ এ দিন ফরাসি সমুদ্র সৈকতে বাঙালি সজ্জায় দেখা দিলেন নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার ও সিনেমার প্রযোজক পুলক কান্তি বড়ুয়া। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাঞ্জাবি, লুঙ্গি ও গামছা পরে বেরিয়েছিলেন তারা, সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। এ পোশাকেই ‘মা’ সংশ্লিষ্টরা ঘুরেছেন কান শহরে। এমনকি পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনেও একই পোশাকে প্রবেশ করেছেন। মার্শে দ্যু ফিল্মের বাংলাদেশের স্টলে বসে বাঙালি পোশাকে সিনেমার প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। এ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্মাতা শেয়ার করলে নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে মা সিনেমার গল্প। মৃত ঘোষিত সাত মাস বয়সী এক সন্তানকে নিয়ে তার অসহায় মায়ের আবেগের গল্প পর্দায় তুলে ধরেছেন অরণ্য আনোয়ার। মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। ১৯ মে সিনেমাটির মুক্তির কথা থাকলেও এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২৬ মে প্রেক্ষাগৃহে আসছে ‘মা’। কান উৎসবে প্রশংসিত এ সিনেমা কেমন দর্শক টানে, সেটাই এখন দেখার পালা।
অন্যদিকে এবার কানের মার্শে দ্যু ফিল্মের আনুষ্ঠানিকতা চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। উৎসবের পর্দা নামবে ২৭ মে। কান উৎসবে বাংলাদেশের নির্মাতা ও তারকাদের এ যাত্রা বহমান। গত বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব—দ্য মেকিং অব আ নেশন’-এর ট্রেলার উদ্বোধন করা হয়েছিল। এছাড়া মার্শে দ্যু ফিল্মের ‘ফ্যান্টাস্টিক সেভেন’ ইভেন্টের জন্য নির্দিষ্ট ঘরানার নবীন প্রতিভাবানদের তুলে ধরে বিশ্বের এমন শীর্ষস্থানীয় সাতটি উৎসবের সাতটি চলচ্চিত্র নির্বাচন করা হয়েছিল। এ ইভেন্টে নির্বাচিত হয়েছিল নুহাশ হুমায়ূনের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’। এর আগে ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ‘আঁ সার্তে রিগা’-তে প্রতিযোগিতা করেছিল বাংলাদেশের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন আজমেরী হক বাঁধন। এর আগে ২০০২ সালে তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মাটির ময়না’ উৎসবের একটি বিভাগে মনোনয়ন পায়। দেশীয় সিনেমার এ আন্তর্জাতিক যাত্রা চলচ্চিত্রাঙ্গন সমৃদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত।