সুন্দরবনের শরণখেলা রেঞ্জে র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে আব্বাস বাহিনীর দুই জলদস্যু নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে র্যাব অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে। বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
সুন্দরবনে রয়েছে বেশ কিছু বাহিনী
নোয়া বাহিনী: দলনেতা নোয়া মিয়ার নামে এই বাহিনী। সদস্য সংখ্যা ১২ জন। পশ্চিম সুন্দরবনের ভারত সীমান্ত থেকে শিবসা নদী পর্যন্ত এই দলের তৎপরতার সীমানা। দলনেতা নোয়া মিয়া ছিলেন মাস্টার বাহিনীর সাবেক প্রধান। নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যা শুরু হলে তিনি দলের ভেতরে অভ্যুত্থানের শিকার হন এবং দল থেকে বহিস্কৃত হন। পরে তিনি নিজের দল গড়ে তোলেন।
মজনু বাহিনী: সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলে সাতক্ষীরা জেলায় ছিল এই বাহিনীর বিচরণ ক্ষেত্র। দলের সদস্য সংখ্যা ২০ জন। দলনেতার নাম মজনু গাজী। তিনি ছিলেন খুলনার একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু তার আসল ব্যবসা ছিল জলদস্যুদের অস্ত্র এবং গুলি সরবরাহ করা। পরে তিনি মোতালেব বাহিনীর একজন অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মোতালেব বাহিনীর প্রধান মোতালেব ২০১১ সালে র্যা বের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর মজনু গাজী দলনেতা হন। তিনি সুন্দরবনের অস্ত্র ও গোলাবরুদ সরবরাহ নেটওয়ার্কের একজন হোতা। নয় জন সঙ্গী নিয়ে ১৪ই জুলাই, ২০১৬ তিনি আত্মসমর্পণ করেন। তার জমা দেয়া অস্ত্রের মোট সংখ্যা ১৮টি।
আলিফ বাহিনী: দলনেতা আলিফ মোল্লা ১৯ জন সঙ্গী নিয়ে চলতি বছরের ২৯শে এপ্রিল আত্মসমর্পণ করেন। সংগঠনের ভেতরে তিনি দয়াল নামে পরিচিত। সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবনের একাংশ ছিল এই দলের কবলে। আলিফ মোল্লা ছেলেবেলা থেকে জলদস্যুতায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি মোতালেব বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে নিজের দল গড়ে তোলেন। র্যা ব জলদস্যু দমনে অভিযান শুরু করার পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
ইলিয়াস বাহিনী: এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। সুন্দরবনের বাগেরহাট এবং খুলনা জেলার বড় অংশে এরা দস্যুতা করতো। রাজু বাহিনীর প্রধান রাজু দস্যুবৃত্তি ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এর পর ইলিয়াস দলের হাল ধরেন। দুই জন সাথী নিয়ে তিনি আত্মসমর্পণ করেন ২৪শে জুলাই,২০১৬ সালে। রাজু বাহিনীতে অস্ত্র সংখ্যা প্রায় ২০০ হলেও আত্মসমর্পণের সময় অস্ত্র জমা পড়ে সাতটা।
ছোট ছোট দস্যু দল: বড় দলগুলোর বাইরে সুন্দরবন এবং উপকূলীয় এলাকায় এক সময় বেশ কতগুলো উপদল তৎপর ছিল। এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো: আলম বাহিনী, শান্তু বাহিনী, সাগর বাহিনী, খোকা বাবু বাহিনী, ছোট রাজু বাহিনী এবং কবিরাজ বাহিনী।
সুন্দরবনের নারী ডাকাত: রহিমা খাতুন (প্রাইভেসির স্বার্থে ভিন্ন নাম ব্যবহৃত হয়েছে।)-এর সাথে প্রতিবেদকের দেখা হয় মংলার চিলা বাজারে। অতি সাধারণ এক গ্রামীণ নারী। আটপৌরে শাড়ি পড়া। মিষ্টি স্বভাবের। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি প্রয়োজনে ভয়ানক প্রখর হতে দেখা যায়। সামনাসামনি দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না যে তিনি এক সময় সুন্দরবনের এক ভয়ঙ্কর জলদস্যু দলের নেতা ছিলেন।
১৯৮০ দশকে নন্দবালা, চরপুটিয়া, শ্যালা নদীর আশেপাশের এলাকায় জলদস্যুতা করতো রহিমা খাতুনের দল। এক সময় এই দলের নেতা ছিলেন তার বাবা। এরপর ৯০-এ দশকের মাঝামাঝি পুলিশ তাকে অস্ত্রসহ আটক করে। বিচারে তার জেল হয়। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আর জলদস্যুতায় ফিরে যাননি। দলটিও ভেঙে যায়। এখন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিয়ে তার সংসার চলে।