খবরবাড়ি ডেস্কঃ গাইবান্ধা বিশিষ্ট সাংবাদিক, ছড়াকার এবং দক্ষ শিশু ও যুব সংগঠক মশিয়ার রহমান খান মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার (১৯ মার্চ) ভোরে ঢাকার রামপুরায় একমাত্র সন্তান ডা. ইশতিয়াক খান নির্ঝরের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তাঁর মৃত্যুতে গাইবান্ধায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্বজনরা জানান, বুধবার বাদ এশা গাইবান্ধা গোরস্থান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের জানাজা শেষে পৌর কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হবে।
মশিয়ার রহমান খান ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চন্ডিপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হেমায়েত হোসেন খান ও মজিদা খানম দম্পতির ৬ ছেলের মধ্যে পঞ্চম সন্তান তিনি। তাঁর স্ত্রী তাজিনা আকতার রাকা সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। একমাত্র ছেলে ডা. ইশতিয়াক খান নির্ঝর পেশায় চিকিৎসক।
মশিয়ার রহমান খান গত শতকের ষাটের দশকে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। সংখ্যায় বেশি না হলেও তাঁর লেখার বৈচিত্র্য ও মান পাঠকদের বিমোহিত করেছে। তিনি স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্রে সৃজনশীল লেখালেখি করেছেন। প্রচারবিমুখ মশিয়ার রহমান খান ‘ছন্দের আলপনা’ ছড়া সংকলনের অন্যতম ছড়াকার। তিনি শিশু সংগঠন সাত ভাই চম্পা এবং গাইবান্ধা সাহিত্য পরিষদের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
মশিয়ার রহমান খান ১৯৭২ সালে বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (বিপিআই)-এর গাইবান্ধা সংবাদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালের শেষদিকে দৈনিক বাংলার বাণীতে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দীর্ঘদিন দৈনিক ইত্তেফাক-এর গাইবান্ধা সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গাইবান্ধা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক গাইবান্ধা’ ও ‘দৈনিক সন্ধান’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। মশিয়ার রহমান খান ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত গাইবান্ধা প্রেস কাব-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে প্রেস কাবের একাংশের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
গাইবান্ধার সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র জগতে স্মরণীয় অবদানের জন্য মশিয়ার রহমান খান ২০২১ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) কর্তৃক জিইউকে অ্যাওয়ার্ড-২০২১ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানে বেশ কিছু সম্মাননা পদক অর্জন করেন।
মশিয়ার খান ছড়া লিখেছেন দীর্ঘ সময় ধরে। তিনি লেখালেখি শুরু করেন স্কুল জীবন থেকে। দীর্ঘ সময়ের নানা বাঁকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তাঁর ছড়ার বিষয় বস্তুতে এসেছে ভিন্নতা। সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, পশ্চাদপদতা, অবৈজ্ঞানিক চিন্তা চেতনা, ভন্ডামি, শঠতা লেখককে ভাবিত করে। যার প্রভাব সরাসরি তার লেখা ছড়াগুলোতে পড়েছে; কখনো তির্যক, কখনো শ্লেষ, কখনো রসাত্মক ভঙ্গিতে। লেখকের ভাবনা ও প্রকাশভঙ্গী আর দশজনের চেয়ে ভিন্ন ও ব্যতিক্রমী। গভীর অভিনিবেশে ছড়া লেখেন তিনি। যা সচেতন পাঠককে চমকিত করে।
জাতীয় পত্র পত্রিকাসহ বহু ছড়া সংকলনে তাঁর ছড়া প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ বিরতী শেষে তিনি ২০১৮ থেকে আবার ছড়া লিখতে শুরু করেন। বিশেষত: বিগত ফ্যাসিস্টী সরকারের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তার ছড়ার কলম ঝলসে ওঠে। আমরা ছিলাম খোঁয়াড়ে বইটি সরকারের সে সময়ের কার্যকলাপ নিয়ে রচিত। এটিই লেখকের প্রথম প্রকাশিত ছড়ার বই।
৪০ বছরের পেশাগত জীবন কেটেছে জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকতায়। পাশাপাশি নিজস্ব সম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন দৈনিক সন্ধান ও সাপ্তাহিক গাইবান্ধা পত্রিকা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.