পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেল ও সংশোধনাগারে আটক বিদেশি নাগরিকদের ৯৪ শতাংশ বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশি বন্দীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কারা বিভাগ। কারণ তাদের একটি বড় অংশের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বন্দীদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তাদের পরিবারের সদস্যরা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও মিলছে না সহযোগিতা। এমন অবস্থায় সোমবার বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশিসহ বিদেশি বন্দীদের নিয়ে সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের কারামন্ত্রী অখিল গিরি।
মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন পশ্চিমবঙ্গের জেলগুলোতে বাড়ছে বিদেশি বন্দীর সংখ্যা। এদের মধ্যে একটা বড় সংখ্যক রয়েছেন বাংলাদেশি বন্দী। কিন্তু বাড়েনি জেলের ধারণক্ষমতা। এমনকি সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও জেলেই রয়ে গেছেন বাংলাদেশ, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাপানি বন্দী। ফলে জেলবন্দীদের মানবাধিকার নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে তেমনি খরচ বাড়ছে রাজ্যের।
এদিন বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের জেলে সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঠিক কতজন বন্দী আটকে রয়েছে কারা মন্ত্রীর কাছে তার হিসাব চান শাসকদলের ভগবানগোলা বিধানসভার বিধায়ক ইদ্রিস আলী। এর জবাবে কারামন্ত্রী অখিল গিরি বলেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংশোধনাগারে ৩১ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৭৫২ কারাবন্দী আছেন। তাদের মধ্যে মোট বিদেশি বন্দীর সংখ্যা দুই হাজার ৮৪ জন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশি বিচারাধীন বন্দি রয়েছেন এক হাজার ৯৫১ জন। শতাংশের হিসাবে দাঁড়ায় ৯৩ দশমিক ৬২ ভাগ। মিয়ানমারের ৬২ জন। যুক্তরাষ্ট্রের বন্দী আছেন ৬ জন। এছাড়া জাপান ও নেপালের কয়েকজন বন্দী রয়েছেন। বিদেশি বন্দীদের মধ্যে সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে মোট ১৬০ জনের। এদের মধ্যে আবার ১২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক। যা প্রায় ৭৯ শতাংশের (৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ) সমান।
পরে এ বিষয়ে চ্যানেল-24 কে মন্ত্রী বলেন, বিদেশি বন্দিদের মধ্যে সব থেকে বেশি সমস্যা বাংলাদেশি বন্দীদের দেশে ফেরাতে। মন্ত্রীর দাবি সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া সমস্ত বন্দিদের তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বন্দির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে না।
তার অভিযোগ বারবার কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হলেও কেন্দ্রের তরফে সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও বন্দী ফেরৎ পাঠাতে রাজ্য সরকার সহযোগিতা পাচ্ছে না। এমনকি বন্দীদের পরিবারের সদস্যরা কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। রাজ্য সরকারের তরফে সব ধরনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও তাই বন্দী ফেরৎ পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও বিচারাধীন যেসব বাংলাদেশি বন্দী রয়েছে তাদের সংখ্যাও সময়ে সময়ে বাড়ছে।
মন্ত্রীর দাবি মূলত অনুপ্রবেশের মামলাতেই সব থেকে বেশি বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের বন্দী পশ্চিমবঙ্গের জেলে আটক অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করার দায়েও আটক রয়েছেন বহু বাংলাদেশি মৎস্যজীবী। এমন অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের জেল গুলোর পরিকাঠামো বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন কারা মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে এদিন ফের সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি বন্দীদের দেশে ফেরাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেন মন্ত্রী।