জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়ার নামাজে জানাজা শেষে সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধা ৬টায় সাঘাটা উপজেলার মরহুমের গটিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে দাফন সম্পন্ন হয়। এসময় শোকার্ত হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল।
সোমবার দুপুর ২টায় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহ তেঁজগাও বিমানবন্দর থেকে স্বশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের হেলেঞ্চা মাঠে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অবতরণের পর প্রথম জানাজার জন্য ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গার্ড-অব-অনার প্রদান করা হয়। গার্ড-অব-অনার শেষে মরহুমের প্রথম জানাযা নামাজ ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এই জানাজায়। জানাযা শেষে মরহুমের কফিনে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আওয়ামী লীগ, সাত উপজেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগের সরকারি দপ্তর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ীসহ সর্বশ্রেণির মানুষ ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর মরহুমের নিজ বাড়ি গটিয়া গ্রামে আসর নামাজ পূর্বে দ্বিতীয় জানাযা এবং বাদ আসর সেখানে তৃতীয় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপিসহ আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা, বিচারপতি খুরশিদ আলম খুশি এবং জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, নাছিরুল আলম স্বপন, জিএম সেলিম পারভেজ, মরহুমের ছোট ভাই মো. ফরহাদ রাব্বীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য; ২০২১ সালের জুনে তাঁর পেটে টিউমার অপারেশনের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য আগস্ট মাসে তাঁকে ভারতে এবং পরে সেখান থেকে তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই রাত ২টায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি ¯িপকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। ১৯৬১ সালে তিনি গাইবান্ধা কলেজে ভর্তি হন। তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ফজলে রাব্বী মিয়া আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করাকালীন রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভের পর ১৯৮৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য হন। ফজলে রাব্বীর চাচা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ চালু করলে ফজলে রাব্বী সে সময় অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন চাচার মাধ্যমে মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া ১১নং সেক্টরে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি সপ্তমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং দশম ও একাদশ সংসদে ডেপুটি ¯িপকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।