উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইলের এ্যাসিল্যান্ড অফিসসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ-বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নানাবিধ কাজে দেদারছে নেয়া হচ্ছে ঘুষ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, এ্যাসিল্যান্ড অফিসের অফিস আদেশের নথিও গায়েব করা হচ্ছে। উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী মোঃ ওমর আলী নামজারী সহ বিবিধ কাজ করে থাকেন। তার চারপাশে দালালসহ ১০/১৫ জন লোক সবসময়ই কাজ করিয়ে নেবার অপেক্ষায় থাকেন। স্থানীয় দালালসহ লোকের ভিড়ের ছবি তুলতেই তেলেবেগুনে জ¦লে ওঠেন ওই কর্মকর্তা। তিনি রেগে বললেন,অনুমতি না নিয়ে ছবি তুললেন কেন। অভিযোগ রয়েছে, মোঃ ওমর আলী কাজের চাপ আছে বলে লোকদের দীর্ঘদিন ধরে ঘুরান। যে লোকে টাকা বেশি দেয় তার ফাইলটা আগে ধরেন। তিনি দালালের মাধ্যমেই বেশি কাজ করেন। নড়াইলের লোহাগড়া বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী শাহ ফয়সাল আলম, অভিযোগ করেন, আমি গত ২৭ আগষ্ট ডিসি স্যারের কাছে ৮৭ নং মাইটকুমড়া মৌজার সরকারি খাসজমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্যে আবেদন করি। ডকেট নং- ১৫৫৯। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি) স্যার ৪ সেপ্টেম্বর লোহাগড়ার এ্যাসিল্যান্ডকে সরেজমিন তদন্তপূর্বক বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অত্র কার্যালয়কে অবহিত করবার আদেশ দেন। ডিসি অফিসের আদেশের পত্র ৯ সেপ্টেম্বর হাতে পেয়ে এসিল্যান্ড তার ২৬ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত (স্বারকে) পত্রে নড়াইলের লোহাগড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আঃ ছালাম মোল্যাকে উচ্ছেদযোগ্য হলে প্রস্তাবসহ প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন। আঃ ছালাম মোল্যা গত ২২ অক্টোবর নিজ স্বাক্ষরিত (স্বারক-৩২৯) তদন্ত প্রতিবেদন তার পিয়ন মোঃ আব্দুল মান্নান এর মাধ্যমে এ্যাসিল্যান্ড অফিসে পৌঁছে দেন। ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আঃ ছালাম মোল্যা স্থানীয় সাংবাদিক সহ আবেদনকারীর সামনেই চেইনম্যান ফারুককে বলেন, আমার পিয়ন নিজে আপনার কাছে প্রতিবেদন দিয়ে গেছে। ফারুক কখনো বলছেন ফাইল খুঁজে পাচ্ছি না। কখনো বলছেন ফাইল পাইনি। এবিষয়ে এ্যাসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন বললেন, এডিসি ও এ্যাসিল্যান্ড স্যারের দুইটি আদেশপত্রের চিঠি পাওয়া যাচ্ছে না। ওই আদেশপত্রের কপি না দিলে ইউএনও স্যারও সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ওই ফাইল গায়েব করা হয়েছে। নড়াইলের দিঘলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে গত ২৪ নভেম্বর অফিসে যান স্থানীয় এক সাংবাদিক। ওই সময় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সৈয়দ মুস্তাফিজুর রহমান চেয়ারে বসে সিগারেট ফুঁকছিলেন। উপস্তিত সাংবাদিক তার মোবাইল ক্যামেরায় ওই দৃশ্য ধারণ করায় চোটে ওঠেন ওই কর্মকর্তা। তিনি জবরদস্তি করে সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে গালিগালাজ করে ভিডিও ফুটেজ মুছে দেন। অভিযোগ রয়েছে, তালবাড়িয়া গ্রামের তুরাপ ও সুরাপ মন্ডল নামজারী মামলার প্রতিবেদন নিতে দিঘলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে ৭দিন ঘুরছেন। চরদিঘলিয়ার সোহান জমির দাগ নামবার জানতে আসলে ওই কর্মকর্তা ২শ টাকা দাবি করে। ১শ টাকা দেয়ায় সোহানকে লাঞ্চিত করা হয়। কুমড়ি গ্রামের আতিয়ার রহমান নামজারী মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিতে ১০ দিন ঘুরছেন। দিঘলিয়া ইউপি মেম্বর আলম সহ কয়েকজনে অভিযোগ করেন, আসাদ ফকিরের কাছ থেকে নায়েব সৈয়দ মুস্তাফিজুর রহমান দাখিলা বাবদ ৩হাজার টাকা নিয়ে ৩শত টাকার রশিদ দিয়েছেন। মাটিয়াডাঙ্গার বাবুল খান অভিযোগ করেন, ৬২ সালের পর্চা নিতে ডিসি অফিসে আবেদন করেছিলাম। নায়েব ভুল প্রতিবেদন দেয়ায় আমার পর্চায় দাগ নামবার ভুল এসেছে। দিঘলিয়া এলাকার নির্মল কুমার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন,গত ২৪ নভেম্বর দাখিলা কাটতে গেলে দাবিকৃত ২হাজার টাকা না দেয়ায় নায়েব আমাকে ৩৬৪ টাকার দাখিলা রশিদ দিয়েছেন। কিন্তু রশিদে আমার জমির দাগ নামবার লেখেন নাই। অভিযোগ রয়েছে, দাবিকৃত টাকা না দিলে ওই কর্মকর্তা দাখিলায় জমির দাগ লেখেন না। আমডাঙ্গা গ্রামের আমিনুর রহমান অভিযোগ করেন, আমার স্ত্রী দুটি নামজারী মামলায় লোহাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা আঃ ছালাম মোল্যা কে ২৫শত টাকা, এ্যাসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৩শ টাকা, চেইনম্যান ফারুককে ৩শ টাকা, আবুল কালাম আজাদ পিয়নকে ৩শ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। ফারুক আরো ১ হাজার টাকা চেয়েছে। আমার কাজ এখনো হয়নি। দোপাদাহ গ্রামের আতিয়ার সিকদারের অভিযোগ, নামজারী পর্চা নিতে এসেছি। ২শ টাকা চেয়েছে অফিস স্ট্যাফরা। আবুল কালাম আজাদ পিয়ন নামজারী মামলার নোটিশজারীর জন্য সারুলিয়া গ্রামের চম্পার কাছ থেকে নিয়েছেন ২৫০ টাকা। অফিস সূত্র জানায়, এ্যাসিল্যান্ড এম,এম আরাফাত হোসেন গত ১৩ অক্টোবর অনত্র বদলী হয়ে যান। এর পর থেকে ইউএনও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র জানান, নড়াইলের দিঘলিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ্যাসিল্যান্ড অফিসের স্ট্যাফদের বিষয়টি দেখছি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষ নামজারীসহ বিভিন্ন কাজে গিয়ে দিনের পর দিন ঘুরপাক খাচ্ছেন। যে বেশি টাকা দিচ্ছেন তার কাজ আগে হচ্ছে। টাকা না দিলে কাজই হচ্ছে না। ভূক্তভোগীরা যেখানে বলছেন, এ্যাসিল্যান্ড স্যার না থাকায় কাজ কম হচ্ছে। সেখানে উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী মোঃ ওমর আলী সাংবাদিকদের বলছেন এ্যাসিল্যান্ড স্যার না থাকায় কাজ বেশি হচ্ছে। ভূক্তভোগীরা জানায় এ্যাসিল্যান্ড স্যার না থাকলে স্ট্যাফরা ঘুষ নিয়ে নির্বিঘেœ দিনপার করতে পারেন। ইউএনও স্যার এ্যাসিল্যান্ড অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তাই এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ লেনদেনের বেশি সুযোগ পাচ্ছে।