সিরিয়ায় পালানো আইএস-বধূ শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, যুক্তরাজ্যে সিলেটিদের মধ্যে তা নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশে বসবাসরত সিলেটিদের অনেকেই চিন্তা করছেন, তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাগরিকত্বও এর মধ্যে দিয়ে হুমকির মুখে পড়লো কিনা। খবর বিবিসি বাংলার
প্রায় ৫০ বছর যাবৎ লন্ডনে বসবাসরত মহিব চৌধুরী জানালেন, এ ঘটনা লন্ডনে বাঙালী কমিউনিটিতে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তার ভাষায় শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি এখন কমিউনিটির ভেতরকার আলোচনায় হট টপিক।
তিনি বলেন, এটা এক বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে আমরা পিতা-মাতারা বেশি উদ্বিগ্ন। তাদের সন্তানরাও এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে যে এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেল, তার তো বিচার হতে পারতো! কিন্তু তার নাগরিকত্বই বাতিল হয়ে গেল! ইটস টু মাচ।
লন্ডন প্রবাসী আরেকজন মাদানিয়া মনোয়ারা। তিনি বলেন, শামীমার সিরিয়া যাবার ঘটনার পর থেকেই লন্ডনে বাঙালী কমিউনিটিতে বাড়তি সতর্কতা দেখা দিয়েছে। আগে তাদের উদ্বেগের বিষয় ছিল মাদক বা বুলিং এগুলো । কিন্তু শামীমার পর উগ্রবাদ এবং এখন নাগরিকত্ব বাতিল নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, অনেকেই সব সময় একটা আতঙ্কে থাকে। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে, কী করতেছে, কার সাথে মিশতেছে? এখন অনেকেই… যেমন আমার ভাই তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে, আবার সাথে করে নিয়ে আসে। ও বলছিল যে, প্রয়োজন হলে কাজে মিস দিব – কিন্তু আমার বাচ্চাদের নিরাপত্তা দেখতে হবে, যাতে তারা কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে।
সিলেট অঞ্চলের বহু পরিবারের আত্মীয় স্বজন যেহেতু ব্রিটেন প্রবাসী – তাই এই উদ্বেগ ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশে থাকা সিলেটিদের মধ্যেও।
সিলেটের বাসিন্দা আছিয়া খানম শিকদারের ছেলে মেয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করে লন্ডনে। নাতিনাতনিরাও জন্মসূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক এবং সেখানেই বড় হয়েছেন। শামীমার সিরিয়া যাওয়া এবং সম্প্রতি নাগরিকত্ব হারানোর ঘটনা ছুঁয়ে গেছে তার পরিবারকেও।
ব্রিটেনে জন্ম নেয়া তরুণরা কিভাবে কট্টরপন্থী হচ্ছে – সেটিও ভাবাচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, আমরাতো চিন্তা করবোই। হয়তোবা কাল আমার নাতিওতো এই পথ নিতে পারে! আমার ছেলেকেও বলতেছি, মেয়েকেও বলতেছি – ধর্ম শিক্ষা দিবা কিন্তু প্রপার।
সিলেটের আরেক বাসিন্দা সেলিম আউয়ালের পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই আছেন লন্ডনে। নিজের মেয়েকেও ব্রিটেনে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে তার। শামীমার ঘটনা নিয়ে বাড়তি কোন উৎকণ্ঠা না দেখালেও আত্মীয় স্বজনদের সতর্ক হওয়ার বিষয়টি পরিবারের সবাই বলছেন।
তিনি বলেন, যা দেখছি, এটাতো উদ্বেগের ব্যাপার। আমার মনে হয় যে একটু যদি সচেতন থাকা যায়… এটা কিন্তু স্বীকার করতে হবে যে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা যদি দেয়া সম্ভব হয়, ইসলামের যে মূল সৌন্দর্য্য, মানবিকতা তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
একই বাড়ীর সদস্য ডলি শিকদার বলেন, তার পরিবারের আত্মীয় স্বজন অনেকেই লন্ডনে থাকেন। স্কুল থেকে শামীমা যখন সিরিয়া যায় তখন থেকেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ছোট সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে, কীভাবে যাচ্ছে কার সাথে মিশতেছে এটা যদি ভাল করে অভিভাবকরা লক্ষ্য না করে তাহলে এরকম আরো হবে। যেহেতু নতুন শুরু হইছে জিনিসটা।
যেহেতু সিলেটিদের মধ্যে অনেকেই চান তাদের সন্তান যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হোক। ডলি শিকদারও স্বপ্ন দেখেন তাদের ছোট সন্তান একদিন যুক্তরাজ্য যাবে। কিন্তু শামীমার নামের সঙ্গে যেহেতু বাংলাদেশ জড়িয়ে গেছে – সেটি নিয়ে নানা ভাবনার কথা জানালেন তিনি।
তিনি বলেন, কিছু হলেই বাংলাদেশকে টার্গেট করে। গরীব দেশ, মুসলমান দেশ। এখন যেটা শুরু, ভবিষ্যতে ভিসা দেবে কিনা। আরো জটিল করবে কিনা?
সিলেটিদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয় স্পষ্ট যে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল নিয়ে তারা যতটা না উদ্বিগ্ন – তার চেয়েও বেশি চিন্তিত কেন এবং কিভাবে উন্নত দেশে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা এখনকার প্রজন্ম উগ্রতার দিকে ঝুঁকছে – সেটি নিয়ে।