এবার বরগুনার পাথরঘাটায় তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল (২২), সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্ট (২১), সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম রায়হান (১৯) উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মো. মাহমুদ (১৮) ও কলেজের নৈশ প্রহরী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৪)।
বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক সাংবাদিকদের জানান, চলতি বছরের ১০ আগস্ট পাথরঘাটা কলেজের পশ্চিম পাশের পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক তরুণীর গলিত লাশ উদ্ধার করা হয় পুলিশ। ঘটনার পর থেকে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তে লেগে থাকে পুলিশ। পরে তথ্য পেয়ে গত শুক্রবার পাথরঘাটা কলেজের নৈশ প্রহরী মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে গভীর রাতে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
পরে জাহাঙ্গীরের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদ ও রায়হানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশ সুপার বিজয় বসাক আরো বলেন, এখনো পর্যন্ত নিহত তরুণীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে রবিবার গ্রেপ্তারকৃত দানিয়াল এবং সাদ্দামকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তরুনীর পরিচয় পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। তবে মাহমুদ এবং রায়হান এ হত্যাকান্ড এবং হত্যাকান্ডের পর লাশ পুকুরে লুকানোর সাথে সম্পৃক্ত ছিলো বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলেও পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান।
সর্বশেষ রবিববার দুপুর ১২টার দিকে পাথরঘাটা কলেজ চত্তর থেকে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্টকে আটক করে ডিবি পুলিশ। যেকোনো সময় তারে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দি নেয়া হবে। সোমবার সকাল ১১টার পর বরগুনা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক আনাষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান।
আরেক মানিকের সন্ধান, ছয় নারী ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে আলোচনায় ছাত্রলীগ নেতা আরিফ!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষক মানিকের মত আরেক মানিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। সে একের পর এক ফাঁদে ফেলে ছয়জন নারীকে ধর্ষণ এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করে। এমনকি ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় ওই লম্পট। এরপরও ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিওগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। এনিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অভিযুক্ত আরিফ হোসেন হাওলাদার (২২) শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে নিশ্চিত করেছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ।
স্থানীয়রা জানায়, আরিফ স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। ২০১৫ সালের জুন মাসে তাকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে।
আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রথমে গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে এক গৃহবধূর ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। উক্ত ধর্ষণ চিত্রও গোপনে ভিডিও করে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে ধর্ষণের ওই ভিডিও ইন্টানেটের মাধ্যমে এখন এলাকার মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এখানেই শেষ নয়, এভাবে একের পর এক ফাঁদে ফেলে ছয়জন নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে।
তবে লোকলজ্জার ভয়ে এসব নারীদের কেউ এ ব্যাপারে কোনো মামলা করেননি। ঘটনার শিকার কলেজছাত্রীরা লোকলজ্জায় কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এসব নারীদের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। এদের মধ্যে একজন প্রবাসীর স্ত্রীও রয়েছে। এরমধ্যেই তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর এক গৃহবধূ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন।
ঘটনার শিকার এক গৃহবধূর বোন অভিযোগ করে বলেন, আরিফ তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছেন। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আতঙ্কে ও লোকলজ্জার ভয়ে এখনো মামলা করেননি।
ভিকটিম এক কলেজছাত্রী বলেন, মরে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই, এখন সমাজে কীভাবে মুখ দেখাব? আরিফ আমাকে শেষ করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
এবিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, আরিফ এমন চরিত্রহীন ও ভয়ংকর মানুষ, এমনটা আমাদের জানা ছিল না। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই এলাকায় যাই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেই। আর আরিফকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আরিফ একাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে ভিডিও ধারণ করার মাধ্যমে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। আইনুযায়ী শাস্তি হোক এই দাবী জানাই।
উপজেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কারের পর থেকে আরিফ গা ঢাকা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাদের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, আমি আরিফের বাবাকে নির্দেশ দিয়েছি তাকে হাজির করার জন্য। বিষয়টি স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানানো হয়েছে। আশা করি তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদি হাসান বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব’
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভেদরগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তা বড় ধরনের সাইবার অপরাধ করেছেন। পুলিশ আরিফকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে, এখনো তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।