প্রথম লেগে ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকা রিয়ালের বিপক্ষে ভিসেন্তে ক্যালেদেরনে অসম্ভব কিছুকে সম্ভব করতে হবে। সেটা জানতো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা। এসব কথা মাথায় রেখেই বুধবার রাতে মাঠে নেমেছিল তারা। ম্যাচের শুরু থেকেই জলন্ত বারুদ ছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। একের পর এক আক্রমণ ছিলো রিয়াল দুর্গের বিপক্ষে। দারুণ দারুণ সব গোলের সুযোগ তৈরি করে এগিয়ে যাচ্ছিল।
১৬ মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলের লিড নিয়ে স্বপ্নের রংধনু ছড়িয়ে দিয়েছিল লস রোজিব্লাঙ্কোসরা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রিয়াল একটি গোল পেলেও ২-১ ব্যবধানে জয় পায় অ্যাটলেটিকো। তবে এই জয় তাদের ফাইনালে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। আগের লেগে এগিয়ে থাকায় দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলের জয় নিয়ে কার্ডিফের টিকিট পেয়েছে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকে সেমিফাইনালের প্রথম লেগটা ৩-০ গোলে জিতেই ফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রেখেছিল তারা। শুরুতে অ্যাটলেটিকো ২ গোলে এগিয়ে গিয়ে সমর্থকদের হৃৎকম্প বাড়ালেও ইসকোর গোলটি এনে দেয় স্বস্তি। খেলার বাকি সময় স্কোরলাইনটা নিজেদেও অনুকূলে রেখে হোম-অ্যাওয়ে মিলিয়ে ৪-২ গোলে নিশ্চিত হলো রিয়ালের আরও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। ডি
নিজেদের মাঠ বলে কথা, শুরুটা যেন সাজানো চিত্রনাট্যের মতোই ছিল অ্যাটলেটিকোর কাছে। ম্যাচের শুরুতেই কর্নার আদায় করে নেওয়া, গোলের একাধিক সুযোগ তৈরি, সবকিছুই যেন হচ্ছিল পরিকল্পনামতোই। সাউল নিগুয়েজ কোকের দারুণ এক কর্নার থেকে শূন্যে লাফিয়ে হেড করে অ্যাটলেটিকোকে এগিয়ে দেন তিনি। দুই মিনিট যেতে না যেতেই ভিসেন্তে ক্যালদেরনের গ্যালারি লালে লাল করে দেওয়া অ্যাটলেটিকো–সমর্থকেরা যেন নিজেদেও চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। শুরুতে গোল করতে ব্যর্থ হওয়া তোরেসে একটা প্রচেষ্টা রুখতে গিয়ে ভুল করে বসলেন রিয়াল ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে। তাঁর ফাউলে বক্সের মধ্যে পড়ে গেলেন তোরেস, আর তাতেই পেনাল্টির বাঁশি রেফারি। আতোয়ান গ্রিজমান প্রাপ্ত পেনাল্টিটি কাজে লাগালেন গোলকিপার কেইলর নাভাসকে ফাঁকি দিয়ে।
দুই গোলে এগিয়ে গিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে অনেকটা পথই এগিয়ে গিয়েছিল অ্যাটলেটিকো। অন্যদিকে রিয়াল শিবিরে তখন রাজ্যের উৎকণ্ঠা। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যেই ৪২ মিনিটে এল সেই ক্ষণ। বাঁ প্রান্তে একটি থ্রো থেকে বল পেয়ে এক পা দুই পা করে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন বেনজেমা। কাট ব্যাক থেকে বল পেয়ে টনি ক্রুসের শটটি অ্যাটলেটিকো গোলকিপার ঠেকিয়েই দিয়েছিলেন। ফিরতি বলে কাছেই দাঁড়ানো ইসকোর শট। ব্যবধান কমলেও রিয়াল ডাগ আউটে তখন জয়ের আনন্দ।
দ্বিতীয়ার্ধটা দুই দলই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে কাটিয়েছে। তবে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত চাপ ধরে রেখেও কিছুই করতে পারেনি অ্যাটলেটিকো। বার্নাব্যুতে বাজে ফুটবল খেলার শাস্তিটাই যেন সিমিওনের দল পেল নিজেদের মাঠে জয় তুলে নিয়েও। এই আফসোসটা অ্যাটলেটিকো ফুটবলারদেও হয়তো থেকে যাবে বহুদিন।
ম্যাচটা জিতেও ফাইনালে যেতে পারল না অ্যাটলেটিকো। হেরেও ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে রিয়াল মাদ্রিদ। আগামী ৩ জুন কার্ডিফে প্রথমবারের মতো নিজেদের শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামবে জিদানের দল। প্রতিপক্ষ জুভেন্টাস, ১৯৯৮ সালে যে দলকে হারিয়ে তারা জিতেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা।