গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী রেলওয়ে কলোনীর ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ কেটে অবৈধ্য দখলদাররা অাবাদি জমি, পুকুর খনন সহ মাঠজুড়ে ফসল মারাই, খর, পাট ও গোবরের খড়ি শুকানোর কাজে ব্যবহার করছে। এতে করে ক্রীড়ামোদি তরুন প্রজন্ম খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা সহ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এলাকার সচেতন মহল, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বিষয়টি অবগত থাকলেও অজ্ঞাত কারনে নিরব ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে (বি আর) লালমনির হাট ডিভিশনের আওতায় ষাটের দশকে জেলার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী রেলওয়ে কলোনীতে ৪ একর জমি অধিগ্রহন করে ইস্পাতের খুঁটি দ্বারা কাঁটাতারের বাউন্ডারি দিয়ে খেলার উপযোগি হিসাবে মাঠটি তৈরী করা হয়। তৎসময়ে ভরতখালী রেলওয়ে কলোনীতে রেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বি হক (বজলুল হক) ইন্সটিটিউট এর তত্ত্বাবধানে অবিভক্ত বাংলার নামিদামি ফুটবল টিমের সমন্বয়ে খেলার অায়োজন করা হতো। দেশ বিভাগের পরে সিমানা পিলার, ইস্পাতের খুটি ও কাটাতারের বেড়া চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়। আশির দশকে বি হক ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম ভাটা পরতে থাকায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঠিক রক্ষনাবেক্ষন ও তদারকির অভাবে জাকজমক পূর্ন খেলাধুলোর ক্ষেত্রে, ক্রীড়ানুরাগি সহ মাঠটি তার প্রান চাঞ্চল্যতা হারাতে থাকে। সেই সুযোগে ভূমি দস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি পরে প্রায় অবিভাবকহীন মাঠের উপর। ধীরগতিতে তারা মাঠ কেটে আবাদি জমি ও পুকুর খনন করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে।
২০০১ সালে জনৈক বাবলু মিয়া রেলের লালমনির হাট ডিভিশনের দায়িত্বেরত জনৈক স্ট্রেট অফিসার(ভূমি) এর যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাঠটিকে খেলাধুলার অযোগ্য এবং পরিত্যাক্ত দেখিয়ে আবাদি জমিতে পরিনত করার জন্য নিজ নামে লিজ নেয়। রেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত ডকুমেন্টস্ বলে মাঠ চাষতে গেলে এলাকাবাসির তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি পালাতে বাধ্য হয়। কিন্তু মাঠের উত্তর, দক্ষিন, পূর্ব ও পশ্চিম দিকের জমিওয়ালারা মাঠ কেটে পুকুর খনন,আবাদি জমি করা, ঘর-বাড়ি নির্মান, গাছ লাগানো ও কর্তন, মাঠের ঘাস উঠিয়ে ফসল মাড়াই ,খর, পাট ও গোবর খড়ি শুকানো সহ অবৈধ্য দখল মুলক নানা কার্যক্রম দীর্ঘদিন থেকে অব্যাহত রেখেছেন। ক্রীড়ানুরাগি তরুন প্রজন্ম শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রে খেলাধুলা করতে গিয়ে অবৈধ্য দখলদারদের সাথে প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা সহ চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
দূর্জয় যুব সংঘ ও সূচনা ক্রীড়া চক্র নামে দু’টি ক্লাবের সদস্যরা প্রতি বছরের ( বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস) বিশেষ দিনগুলোতে খেলাধুলার আয়োজন করে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঠের হালহকিকত সরেজমিনে দেখালেও তাদের তরফ থেকে আশার ফুলঝুরি ছাড়া সমস্যা সমাধানে আজ অবধি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ষাটের দশকে মাঠের সূচনা লগ্নে রেলের সার্ভে কাজে নিযুক্ত ( ভূমি) শাহ মোঃ আব্দুল কাইয়ুম (৮০) এই প্রতিনিধিকে বলেন, অবৈধ্য দখলদারদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বোনারপাড়া হতে ফুলছড়ি তিস্তামুখ ঘাট পর্যন্ত রেলের বিস্তৃর্ন পতিত জমি জবরদখল করে তারা ভূ-রাজত্ব কায়েম করছে। অনেকে নদী ভাঙ্গা অসহায় লোকজনের নিকট পজেশন হস্তান্তর করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রেলের লালমনিরহাট ডিভিশনের আওতাধীন ভূমি রক্ষনাবেক্ষন বা দেখভালের জন্য স্থানীয় ভাবে AIW / PW নিযুক্ত থাকলেও ১৯৭৫ সালের পর থেকে সেক্টরটি আলাদা করায় বর্তমানে বগুড়া থেকে কানুঙ্গ মহোদয়, লালমনিরহাট থেকে স্ট্রেট অফিসার এবং রাজশাহী থেকে চীফ স্ট্রেট অফিসার রেলের ভূমি সম্পর্কিত যাবতীয় তদারকি করে থাকেন। ওনারা বিষয়গুলো অবগত অাছেন। অবৈধ্য ভাবে দখলকৃত জমিগুলো লিজের মাধ্যমে দখলকারিকে প্রদান করলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমান রাজস্ব অায় থেকে বঞ্চিত হতো না। কিন্তু…..! তবে মাঠের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
মাঠের নাজুক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ২নং ভরতখালী ইউনিয়নের পর পর দু’বার নির্বাচিত সফল চেয়ারম্যান মোঃ শামসুল আজাদ শীতল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রেলের উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষ সহ ডিপুটি স্পিকার মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে সমস্যাটির সমাধান করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। শিশু, কিশোর ও তরুনদের শারীরিক বিকাশের লক্ষে খেলাধুলার প্রয়োজন অপরিসীম উল্লেখ করেন । আর এই খেলাধুলার জন্য পরিবেশ সম্মত স্থানের প্রয়োজন। সেদিক বিবেচনায় মাঠটির জুড়িমেলা ভার।
অন্য দিকে এলাকার ক্রীড়ানুরাগি তরুন প্রজন্ম, ক্রীড়াবিদ সহ সচেতন মহলের দাবি, মাঠের সীমানা নির্ধারন, খানাখন্দ ও পুকুর ভরাট সাপেক্ষে পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তারা রেলমন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।