গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দুটি বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসার মাঠ দখল করে দুমাস ধরে রাখা হয়েছে ঠিকাদারি কাজের নির্মাণসামগ্রী। এতে করে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা তো করতে পারছেই না, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভরতখালী-সাঘাটা বাজার পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে গত মার্চ মাসে। এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী দুমাস ধরে রাখা হয়েছে জেলার সাঘাটা উপজেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে। ভোগান্তির শিকার প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয়, কচুয়াহাট উচ্চবিদ্যালয় এবং খামার ধনারুহা (কচুয়াহাট) দাখিল মাদ্রাসা। এগুলো গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভরতখালী-সাঘাটা সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত।
সরেজমিনে ২২ মেদেখা গেছে, ওই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পাথর, ইট, রড ও বালুর স্তূপ। ট্রাকে করে নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়া করায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পরে বৃষ্টিতে এবড়োখেবড়ো হওয়া মাঠে জমেছে কাদা। এর ফলে দুই মাস ধরে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। চলাচলেও তাদের ও শিক্ষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিশেষত ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের অবস্থা করুণ। মাঠের একদিকে পাথর, ইট ও বালুর স্তূপ। অন্যদিকে শ্রমিকেরা রড বাঁধছেন। ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম ও আশিকুর রহমান বলে, আগে তারা প্রতিদিন টিফিনের সময় তো বটেই, বিদ্যালয় শুরুর আগে ও ছুটির পর মাঠে খেলাধুলা করত। কিন্তু দুমাস ধরে খেলতে পারছে না। ঠিকাদার তাদের সুন্দর মাঠটি নির্মাণসামগ্রী রেখে নষ্ট করে রেখেছে। একই শ্রেণির ছাত্র নয়ন মিয়া বলে, ‘শুনেছি অনেক দিন মাঠে ইট, বালু, পাথর থাকবে। তাহলে আমরা খেলাধুলা করব কোথায়?’
ভরতখালী গ্রামের অভিভাবক সুজা মিয়া বলেন, মাঠে বড় বড় ট্রাক আসার কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কাদা জমে শিক্ষার্থীরা চলাচল করতেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ডেপুটি স্পিকারের ছোট ভাই ফরহাদ রাব্বীর নির্দেশে মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। তবে কাজ শেষে ঠিকাদার মাঠ সংস্কার করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কার্যালয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভরতখালী-সাঘাটা বাজার পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ গত মার্চ মাসে হাতে নেওয়া হয়। দুটি প্যাকেজে এ কাজের ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৪৫ কোটি টাকা। আগামী বছরের আগস্ট মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কাজটির দায়িত্ব পেয়েছে আইসিসি লিমিটেড প্যারাডাইস ট্রেডার্স (জেভি) এবং এমবি মতলুবর রহমান (জেভি) নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধে৵ প্রথমটি পেয়েছে ১৪ কিলোমিটার ও পরেরটি পেয়েছে ২১ কিলোমিটার রাস্তার কাজ। এই ২১ কিলোমিটারের কাজ পাওয়া মতলুবর রহমান নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণসামগ্রীই রাখা হয়েছে ওই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে।
সরেজমিনে আরও দেখা গেল,ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয়ের মতোই দশাখামার ধনারুহা দাখিল মাদ্রাসার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মাঠজুড়ে ইট, পাথর ও বালু রাখা। এর ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো মতে মাঠ পেরিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকছে। মাদ্রাসার সুপার এম এ ওয়ারেছ অভিযোগ করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাতারাতি মাঠে নির্মাণসামগ্রী এনে রাখে। পরদিন সকালে ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেপুটি স্পিকারের ছোট ভাই ফরহাদ রাব্বী নাকি মাঠে এসব রাখতে বলেছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে ফরহাদ রাব্বীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখার নির্দেশ দিইনি। তবে আমি শুনেছি, স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঠিকাদারের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। কাজ শেষে তারা ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ সংস্কার করে দেবে।’
এদিকে খামার ধনারুহা দাখিল মাদ্রাসার পাশেই কচুয়াহাট উচ্চবিদ্যালয়। কচুয়াহাট বিদ্যালয় মাঠেও ইট, পাথর, বালু রাখা। প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘ঠিকাদারকে বলেছি আপনার মালামাল এখানে রাখতে পারেন। তবে কাজ শেষে মাঠটি ভরাট করে দেবেন।’
এসব বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মতলুবর রহমানের স্বত্বাধিকারী মতলুবর রহমান মুঠোফোনে বলেন, সড়কের পাশে মালামাল রাখার মতো খোলা জায়গা নেই। তাই ওই সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজ শেষে মাঠ সংস্কার করে দেওয়া হবে। এমনকি ঘাসও লাগিয়ে দেওয়া হবে।