বর্ণিল ফুলে ছাওয়া ক্ষেত, অরণ্য ঘেরা গ্রাম, নদী, নৌকা…! আর একটা নির্ভেজাল প্রেমের গল্পে মোড়ানো আড়াই ঘণ্টা। ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ দেখার স্মৃতি এভাবে ফিরে আসে। বিষাদও ছুঁয়ে থাকে। সিনেমাটির দুই চরিত্র সুলতান ও সোনালীর প্রেম মন উজাড় করেই লিখেছিলেন নাট্যকার ফারুক হোসেন। তিনিই কিনা হারিয়ে গেলেন সমুদ্রে!
ফারুক আর কোনদিন চিত্রনাট্য লিখবেন না। এই সিনেমার চিত্রনাট্যই হয়তো দর্শকের হৃদয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনেকদিন। বিশেষ করে কিছু কিছু সংলাপ— হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
‘সুলতানা বিবিয়ানা’র মাধ্যমেই চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন হিমেল আশরাফ। সুলতান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাপ্পী চৌধুরী। সোনালী চরিত্রে অভিনয় করেছেন আঁচল। সোনালীর বাবার চরিত্রে (ফুলচাষী) ছিলেন মামুনুর রশীদ। আরো ছিলেন শহীদুজ্জামান সেলিম ও অমিত হাসান।
গল্প যতই শক্তিশালী হোক নির্মাণ দুর্বল হলে সিনেমা কখনই দর্শকের নজর কাড়বে না। সেইদিক থেকে পাশ করে গেছেন হিমেল আশরাফ। লোকেশন, ফ্রেম আর রঙের খেলায় চমক দেখিয়েছেন তিনি। প্রথম থেকে শেষ দৃশ্য অবধি টেনে নিতে সক্ষম হয়েছেন সরল সমীকরণে।
অনেক সফল নাটক নির্মাণ করেছেন হিমেল। নাটকের নির্মাতারা সিনেমা বানালে নাটকের মতো হয়ে যায় এমন অভিযোগ প্রায়ই শুনি। হিমেলের সিনেমা নাটক নয়, যার প্রমাণ ‘সুলতানা বিবিয়ানা’।
এতে পাওয়া গেছে অন্য এক বাপ্পীকে। ডিজিটাল এই নায়কের মুখে গ্রাম্য সংলাপ বেশ প্রাণবন্ত। মুক্তির আগেই বাপ্পী বলছিলেন, এ সিনেমায় নিজেকে ভেঙেছেন। আসলেও তাই। আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। আঁচলের অভিনয়ও ছিল বেশ প্রাণবন্ত। আর যার কথা না বললেই নয়— তিনি হলেন শহীদুজ্জামান সেলিম। অভিনয় ও হাস্যরস দিয়ে দর্শকের মন ভরিয়েছেন তিনি। হতাশ করেছেন মামুনুর রশীদ।
দুই-একটি ডায়ালগ উল্লেখ না করলেই নয়। যেমন– সোনালীর উদ্দেশ্যে সুলতান বলছে, ‘আমি দুনিয়াতে আইছি তোমার জন্য, আমি বাইচা আছি তোমার জন্য, আমি মরমু তোমার জন্য, সব নৌকাই একদিন ঘাটে ভিড়ে, আর আমার ঘাটের নাম কি জানো? আমার ঘাটের নাম সোনালী।’
ছবির কাহিনী না হয় হলে গিয়ে দেখার জন্য তোলা থাক। ‘আমার আসল রূপ তুমি দেহ নাই। আমার আসল রূপের কথা মনে হইলে আমারই ডর করে’ বাপ্পীকে বলা মামুনুর রশীদের এ সংলাপের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ‘সুলতানা বিবিয়ানা’র কাহিনী। যার অনবদ্য চিত্রনাট্যে তর তর করে এগিয়ে যাওয়া যায়।
সিনেমার সবকিছু শতভাগ নিখুঁত তাও নয়। অ্যাকশন দৃশ্যে আরেকটু যত্নবান হলে ভালো হতে পারতো। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে নতুন করে শুট করা গান দুটি না রাখলেও পারতেন নির্মাতা। গান দুটিতে আঁচলকে সামান্য মোটা লাগার কারণে খাপছাড়া লেগেছে!
সব মিলিয়ে আশা জাগানোর মতো সিনেমা ‘সুলতানা বিবিয়ানা’। প্রযোজক আরশাদ আদনান ও নির্মাতা হিমেল জানালেন, প্রথমদিন অধিকাংশ হলই হাউজফুল গেছে। তারা আশা করছেন পুরো সপ্তাহ জুড়েই সুলতান ও সোনালী প্রেম দেখবে হল ভরা দর্শক। আশা থাকল তা-ই হবে!