গাইবান্ধা প্রতিনিধি: ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনার চারবছর আজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ওই ঘটনায় গাইবান্ধা জেলায় মারা গেছেন ৪৯জন। ১২জন নিখোঁজ হন। এছাড়া ওই ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন হাত কেউ পা।কিন্তু চারবছরেও আহত পরিবারগুলোকে পূণর্বাসিত করা হয়নি। ফলে তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কার্যালয় সুত্র জানায়, রানা প্লাজা ভবন ধসে গাইবান্ধার ৪৯জন নিহত ও ১২জন নিখোঁজ হন। আহত হন আরও অনেকে। সেসময় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকজনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর গত চারবছরে আর কোনো আর্থিক সহায়তা মেলেনি কারো কপালে।
রানা প্লাজা ধসে আহতরা কাজ করতে না পেরে পরিবারের বোঝা হয়েছেন। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের চকগোবিন্দপুর গ্রামের রিকতা খাতুন।তিনি ২০০৯ সালে রানা প্লাজার ফ্যানটম পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। ওই ভবন ধসের ঘটনায় তিনি ডানহাত হারিয়েছেন। তিনি লোমহর্ষক এই ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।তিনি বলেন, ডান হাতের উপরে ইটের দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে। চারদিন পর করাত দিয়ে হাত কেটে আমাকে বের করা হয়। পরে দুইমাস চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে আসি।
এর একবছর আগে তার দ্বিতীয় স্বামীও তাকে তালাক দেন। পোষাক কারখানায় চাকরির আগে রিকতা খাতুনের আরও একবার বিয়ে হয়েছিল। সেই পক্ষের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। এখন তিনি ধাপেরহাট এলাকায় ভাড়া বাসায় ছেলে রিমন (১৩) ও মেয়ে মিমকে (২) নিয়ে বসবাস করছেন। রিকতা খাতুন বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ১২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া মাসিক ১২ হাজার টাকার মুনাফা দিয়ে সংসার কোনমতো চলছে। কিন্তু সরকারের চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও আজও চাকরি পাইনি।
সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণ দামোদরপুর গ্রামের সায়েব মন্ডলের মেয়ে সোনিয়া বেগম। তিনি ওই ঘটনায় ডান পা হারিয়েছেন। অভাবের সংসারে একটু সুখের আশায় সোনিয়া ও তার স্বামী মিজানুর রহমান চাকরি নিয়েছিলেন রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায়। ২২ দিনের মাথায় ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। মিজানুর সেদিন বাইরে থাকায় প্রানে বেঁচে যান।
সোনিয়া বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার ডান পা কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। সরকার ১০ লাখ টাকা অনুদান দেয়। ওই টাকা থেকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে লাভ পাচ্ছি। এই টাকায় এখনো চিকিৎসা ও সংসার চালাতে হচ্ছে। তাঁর স্বামী মিজানুর রহমান বাড়িতে ছোট আকারের মনোহারি দোকান দেন। কিন্তু মুলধনের অভাবে সেটি বন্ধ আছে। দেড় বছরের শিশু মিম্মি ও বাবা-মাকে নিয়ে কোনরকমে সংসার চলছে। সরকার চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও চাকরি পায়নি পরিবারটির কেউই।