চলতি মৌসুমের শেষে চেলসির সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক শেষ করতে যাচ্ছেন তারকা ডিফেন্ডার জন টেরি। প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটি সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ক্লাবের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জন টেরি ও চেলসি ফুটবল ক্লাব যৌথভাবে আজ ঘোষণা দিয়েছে মৌসুমে শেষে আমাদের অধিনায়ক ক্লাব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।’
৩৬ বছর বয়সী ইংলিশ এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার পশ্চিম লন্ডনের দলটির হয়ে ৭০০রও বেশি ম্যাচ খেলেছেন। চেলসির অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও ইতালিয়ান ম্যানেজার এন্টোনিও কন্টের অধীনে এবারের মৌসুমে মাত্র পাঁচটি লীগ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। চেলসি থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে টেরি বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট সময়েই আমি আমার ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিব। কিন্তু এই মুহূর্তে একটি সফল মৌসুম শেষ করতে ক্লাবকে সহযোগিতা করার জন্য আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২২ বছর এক ক্লাবে কাটানোর পরে অনেক কথাই বলার থাকে। অসাধারণ একটি ক্লাবে থাকতে পেরে অনেক মানুষকেই ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোচ, সতীর্থ, স্টাফ ও সমর্থকরা আমাকে যেভাবে সমর্থন দিয়ে গেছে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়াটা যথেষ্ট নয়। আশা করছি, ভবিষ্যতে আমার এই বিদায় নিয়ে আরো অনেক কিছু বলার সুযোগ পাব।’
চেলসির হয়ে এ পর্যন্ত টেরি ৭১৩ ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। ব্লুজদের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার তালিকায় যা তৃতীয়। ১৯৯৮ সালে ব্লুজদের হয়ে অভিষেক হবার পরে প্রিমিয়ার লীগে ডিফেন্ডার হিসেবে সর্বোচ্চ ৬৬ গোল করেছেন। এছাড়া চেলসিকে নেতৃত্ব দেবার দিক থেকেও তিনি রেকর্ড গড়েছেন। সর্বোচ্চ ৫৭৮টি ম্যাচে তিনি ব্লুজদেও অধিনায়কত্ব করেছেন। এর মধ্যে ক্লাবের হয়ে ১৪টিরও বেশী বড় টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছেন। এর মধ্যে রয়েছে চারটি প্রিমিয়ার লীগ, পাঁচটি এফএ কাপ ও তিনটি লীগ কাপের শিরোপা। চেলসির ম্যানেজার হিসেবে রাফায়েল বেনিতেজের সংক্ষিপ্ত সময়েও টেরি ইউরোপা লীগের শিরোপা উপহার দিয়েছেন। ২০১২ সালে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা। যদিও ঐ আসরে ফাইনালে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে তিনি নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি।
যদিও টেরির বিবৃবিতে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ‘বুট তুলে রাখলেও ভবিষ্যতে স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে তাকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ক্লাব এবং আমার মধ্যে সবসময়ই একটি দারুন সম্পর্ক ছিল। যা আমার খেলোয়াড়ী দিনগুলোর থেকেও অনেক বেশী ছিল। আমাদের মধ্যে দারুন কিছু ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সবকিছুই সময়ের ওপর নির্ভর করছে। আমি মনে করি, সঠিক সময়েই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবসময়ই আমি এই বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতন ছিলাম। যখন যাব সঠিক সময়ে সঠিক ভাবেই যেন যেতে পারি। আমি মনে করি, মৌসুমের শেষ সময়টা ক্লাবের জন্য সঠিক সময়। আমি জানি এখনো অনেক কিছুই আমার দেবার আছে। কিন্তু এটা বুঝি চেলসির হয়ে আমার সময়টা শেষ হয়ে এসেছে। আমি এখনো খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। তবে ভবিষ্যতে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায় আছি। অবশ্যই সেটা ব্লুজদের হয়েই। তবে চেলসির খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুমটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’
চেলসির পরিচালক মারিনা গ্র্যানোস্কায়া বলেছেন, চেলসির সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকেই টেরির অবদানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে চায়। সে একজন অসাধারণ খেলোয়াড়, অনুপ্রেরণাদায়ক অধিনায়ক। ভবিষ্যতে আমরা তাকে আবারো স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত আছি।
২০০৫ সালে পিএফএ দ্বারা বর্ষসেরা খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছিলেন টেরি। আন্তর্জাতিক আসর থেকে অবসরের আগে তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন।সূত্র- বাসস