স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘যারা ইসলামকে ভালোবাসে, তারা জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে না। জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। দেশের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ করতে ইসলামের নামে এই জঙ্গিবাদ ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু কাউকেই ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। সবাইকে নিয়ে এর যথাযথ জবাব দেয়া হবে।’
বুধবার দুপুরে রাজশাহীতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে এ সভার আয়োজন করা হয়। রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) এর আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত উদার মনের মানুষ। এখানে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। আমি প্রথমে লক্ষ্য করেছিলাম ছোট ছোট ছেলেদের। বলত-এরা মাদ্রাসার ছাত্র। এরা এ সমস্ত বোমা ফাটাচ্ছে। আমি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে দিনের পর দিন কাজ করেছি। আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, মাদ্রাসার ছাত্রদের কর্ম এগুলি নয়। তাহলে এগুলি কারা করে? এগুলি করে যারা ষড়যন্ত্র করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গাটিতে গতিরোধ করতে এই জঙ্গিবাদ ছড়ানোর প্রচেষ্টা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজকে শুধু দেশের নেত্রী নন, সারা বিশ্বের প্রসংশিত নেতা তিনি। সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। সারাবিশ্বে যখন জঙ্গির উত্থান, তখন কীভাবে আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করছি! কীভাবে আমরা একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি!’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কথাও আমাকে বলতে হবে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আজকে তারা জীবনকে বাজি রেখে একের পর এক চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। যেখানে যা ঘটনা ঘটছে, পুলিশ হয় আহত হয়েছে, নয় শাহাদাত বরণ করেছে। শোলাকিয়াতেও সেই একই ঘটনা ঘটেছে। আমরা পুলিশের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য, লোকবল বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেই কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনতার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আজকে আমরা জঙ্গিদের কন্ট্রোল করতে পেরেছি। আমরা সব সময় বলি- আমরা নির্মুল করতে পারিনি। সেই জন্যই বলি, আপনারা যে যেখানে আছেন আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আজকে কিন্তু হচ্ছেও তাই। মা তার ছেলেকে আমাদের ধরিয়ে দিচ্ছে। বলছে- আমার ছেলেটা বিপথে চলে গিয়েছিল। তাকে ক্ষমা করে দেন, আমি ধরিয়ে দিয়ে গেলাম। সেই দেশ বাংলাদেশ।’
সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগরের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি বেগম আক্তার জাহান, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ’র ঈমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবসুনন্দ মহারাজ, রাজশাহীর চার্চের ফাদার জেভার্স রোজারিও ও কুমিল্লার শালবন বিহারের অধ্যক্ষ শীলভদ্র মাহাথেরো বক্তব্য দেন।
এ ছাড়াও এ সময় রাজশাহী-২ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন, বিজিবির ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সোহেল উদ্দিন পাঠান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেণী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ সভায় আরএমপির কমিশনার শফিকুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সভায় জেলার সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।